Monday, January 12, 2015

Should avoid the risk of pregnancy গর্ভকালীন ঝুঁকি এড়াতে করণীয়


Should avoid the risk of pregnancy গর্ভকালীন ঝুঁকি এড়াতে করণীয়।

pregnancy
ডা. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান খান :: মানবদেহের রক্তের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে হিমোগ্লোবিন।


রক্তে এ হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে তাকে রক্তস্বল্পতা বা এনিমিয়া বলে। আয়রন বা লৌহ রক্তে হিমোগ্লোবিনের সঠিক মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করে। আমাদের দেশের অনেক মহিলাই শরীরে আয়রনের অভাবজনিত কারণে রক্তস্বল্পতায় ভুগে থাকেন। এর কারণ হিসেবে মহিলাদের প্রতি সামাজিক বৈষম্যমূলক আচরণ, খাবারের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অজ্ঞতা, বয়ঃসন্ধিকাল থেকে শুরু করে সমগ্র প্রজননকালে প্রতিমাসে একবার করে ঋতুবতী হওয়ার ফলে শরীর থেকে রক্তক্ষরণ, কৃমির সংক্রমণ প্রভৃতিকে দায়ী করা যেতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে মহিলাদের শরীরে আয়রনের চাহিদা বেড়ে যায়। গর্ভবতী মা এবং গর্ভজাত বাচ্চার চাহিদা মেটাতে এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বা তিনগুণ আয়রন প্রয়োজন হয়। গর্ভকালীন এ বাড়তি চহিদা পূর্ব হতে বিদ্যমান রক্তস্বল্পতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ৭ গ্রাম/ডেসিলিটার-এর নিচে না নামলে সাধারণত কোনো প্রকার অসুবিধা বোধ হয় না। অনেক ক্ষেত্রে উপসর্গ না থাকলেও রক্ত পরীক্ষা করালে রক্তস্বল্পতা ধরা পড়তে পারে। রক্তস্বল্পতাজনিত কারণে গর্ভবতী মহিলা প্রায় সব সময়ই ক্লান্ত এবং দুর্বল বোধ করেন। অবসন্নতা, মাথা ঝিমঝিম করা, বুক ধড়ফড় করা, অল্প পরিশ্রমে হাঁপিয়ে ওঠা, শ্বাসকষ্ট হওয়া কিংবা হাত-পায়ে পানি আসা মারাত্মক রক্তস্বল্পতার লক্ষণ। এ সময় চামড়া ফ্যাকাশে হয়ে যায়। হাত-পায়ের তালু, জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি এবং চোখের নিচের পাতার ভেতরের দিকে এ ফ্যাকাশে ভাব পরিলক্ষিত হয়। গর্ভকালীন সময়ে এ জাতীয় উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো রক্তের ঐন% পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তস্বল্পতার মাত্রা নির্ণয় করা উচিত। প্রয়োজনে এ পরীক্ষা একাধিকবার করা লাগতে পারে। এছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষার প্রয়োজন হলে তা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে করতে হবে।
রক্তস্বল্পতা নির্ণয় করে উপযুক্ত চিকিৎসা না করালে গর্ভকালীন সময়ে তা বেড়ে যায়। অধিক মাত্রায় রক্তস্বল্পতা হার্ট ফেইলুর, গর্ভপাত কিংবা নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই প্রসবের মতো মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত মহিলাদের বিভিন্ন প্রকার জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে এবং তারা প্রায়ই রোগাক্রান্ত হন। তাছাড়া রক্তস্বল্পতা প্রসবের সময় বা প্রসবের পরে অতিমাত্রায় রক্তপাতের ঝুঁকিও বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়।
উপরোক্ত জটিলতার কথা মাথায় রেখে রক্তস্বল্পতায় আক্রান্ত একজন মহিলার সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত গর্ভধারণ করা উচিত নয়। গর্ভকালীন সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খাবার এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে রঙিন শাকসবজি (যেমন- কচুশাক, ডাঁটাশাক, লালশাক) ও ফলমূল, দুধ, মাছ, মাংস, কলিজা, ডিম প্রভৃতি লৌহসমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়। এছাড়া ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার যেমনÑ আমলকি, লেবু, জামবুরা, আমড়া, আনারস, পেয়ারা ইত্যাদিও খেতে হবে। এতে শরীরে আয়রন বা লৌহের শোষণ ভালোমতো হয়। দুই গর্ভধারণের মাঝে কয়েক বছর সময় নিলেও রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।
একজন সুস্থ মহিলা গর্ভবতী হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো নিয়মিত (অন্তত গর্ভকালের শেষ তিন মাস এবং প্রসব পরবর্তী এক মাস) আয়রণ এবং ফলিক এসিড বড়ি বা ক্যাপসুল খেতে হবে। এ ওষুধ খাওয়ার গুরুত্ব যাতে গর্ভবতী মহিলারা অনুধাবন করতে পারেন এজন্য চিকিৎসকদের উচিত হবে যতœসহকারে এবং বিস্তারিতভাবে এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা তাদেরকে বুঝিয়ে বলা। কোনো কোনো মহিলা আয়রন বড়ি বা ক্যাপসুল খাওয়ার পর অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। এক্ষেত্রে তাদেরকে তা আহারের পর পর বা খাওয়ার মাঝখানে গ্রহণ করতে হবে। আয়রন ট্যাবলেটের কারণে মলের রঙ কালচে হলে কিংবা সামান্য পেটব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য বা বুকজ্বলা হলে বেশি পরিমাণে পানি ও শাকসবজি খেতে হবে। মনে রাখতে হবে পুষ্টিগত কারণে যে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় অল্প খরচে, একটু স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে আয়রণ সমৃদ্ধ দেশীয় খাবার গ্রহণ করলে তা সহজেই প্রতিরোধযোগ্য।
ডা. মুহাম্মদ কামরুজ্জামান খান
জনস্বাস্থ্য ও প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
সহকারী রেজিস্ট্রার, হৃদরোগ বিভাগ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।