থ্রিডি
এনিমেশন, মুভি বা গেম নিয়ে মানুষের আগ্রহের অন্ত নেই। অনেকের কাছে বিষয়টি
এত পছন্দের যে তারা শিখতে চান। বিষয়টি একদিকে যেমন আকর্শনীয় অন্যদিকে
সৃষ্টিশীল এবং লাভজনক। সমস্যা হচ্ছে কাজটি একইসাথে জটিল। বাংলাদেশে থ্রিডি গেম, এনিমেটেড মুভি এমনকি স্পেশাল ইফেক্টের ব্যবহারও উল্লেখ করার মত না। সেকারনে বিষয়টি রহস্য হিসেবে থেকে গেছে অধিকাংশের কাছে।
আপনি
নিশ্চয়ই দেখেছেন একজন মৃতশিল্পী কিভাবে নরম মাটি দিয়ে মুর্তি তৈরী করেন।
মাটিকে পানি মিশিয়ে নরম করে কাদা বানিয়ে নেন। তারপর সেই কাদার এখানে চাপ
দিয়ে, ওখানে উচু করে, সেখানে ছুরি চালিয়ে ইচ্ছেমত মুর্তি বানান। ঠিক একই
পদ্ধতিতে কাজ করে জেডব্রাস (অনেকে জেড এর উচ্চারন করেন জি, সে হিসেবে
জি-ব্রাসও বলতে পারেন।
জেডব্রাশকে
বলা হল ডিজিটাল স্কাল্পচার সফটঅয়্যার। ধরুন আপনার হাতে নরম মাটির একটি
টিউব আছে। যেধরনের টিউব ব্যবহার করে মেহেদি দেয়া হয়। জেড-ব্রাসে তুলি
সিলেক্ট করে আপনি পেতে পারেন তেমনি মাটির টিউব। পছন্দমত যে কোন মাপের, যে
কোন বৈশিষ্টের। যেখানে ব্যবহার করবেন সেখানে ডিজিটাল মাটির থ্রিডি সেপ তৈরী
হবে। গোলাকার বা কোনাকার ব্যবহার করতে হবে এমন কথা নেই, আপনি যেধরনের
প্যাটার্ন চান সেটাই পাবেন। ফটোশপের সাথে তুলনা করতে পারেন, আপনি ছবি আকছেন
আর তৈরী হচ্ছে ফটোশপের টুডি ইমেজের বদলে থ্রিডি বস্তু। যদি কোথাও উচু করতে
চান অন্য একটি ব্রাশ সিলেক্ট করে পেইন্ট করুন, উচু হতে থাকবে। নিচু করতে
চান আরেকটি ব্রাশ ব্যবহার করুন (বাস্তবে একই ব্রাশকে মডিফায়ার কি ব্যবহার
করে একাজ করা হয়)।
মাটির
কাজ করার সময় যেমন কখনো সরম কখনও কিছুটা শক্ত মাটি ব্যবহার করা হয়, আপনি
চাইলেই এই বৈশিষ্ট বলে দিতে পারেন। এছাড়া বাস্তবে মানুষ যত ধরনের
যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে তার সাথে মানানসই সবধরনের টুল দেয়া আছে এতে।
একবার
মুল মুর্তি তৈরীর পর তার গায়ে নানারকম রঙ ব্যবহার (টেক্সচার) করতে পারেন
এর ভেতর থেকেই। থ্রিডি এনিমেশন সফটঅয়্যারে আরো কিছু বিষয় থাকে। লাইট,
ক্যামেরা ব্যবহার থেকে টাইমলাইন কিফ্রেম এসবও পাবেন এর ভেতরেই।
আপনি
হয়ত অন্যান্য থ্রিডি এনিমেশন সফটঅয়্যারের কথা জানেন, কিংবা কোনটি ব্যবহার
করেন। থ্রিডি ষ্টুডিও ম্যাক্স, মায়া, সিনেমা ৪ডি, মোডো ইত্যাদি। এর
প্লাগইনের (গো-জেড) সাহায্যে সরাসরি এই সফটঅয়্যারগুলির সাথে ব্যবহার করতে
পারেন।
থ্রিডি
এনিমেশনের পুরো কাজটি একবার দেখে নেয়া যাক। আপনার প্রথম কাজ মডেল তৈরী
করা। সেকাজ করে নিতে পারেন এখানে। অনেকেই অন্য সফটঅয়্যারের সাথে (যেমন
ম্যাক্স) ব্যবহার করেন ফলে দুই সফটঅয়্যারের সুবিধেই কাজে লাগানো যায়। মডেল
তৈরীর পর তার গায়ে রং চড়ানো হয়। চামড়ার রঙ, পোষাকের রঙ ইত্যাদি। একে লাইট
ব্যবহার করে বাস্তবসম্মত করা হয়। নিভিন্ন দিকে সুবিধেজনক যায়গায় ক্যামেরা
বসানো হয়। এরপর এনিমেট করা হয়।
একজন
মানুষ নিখুতভাবে হেটে যায় কিংবা দৌড়ে কিভাবে যায় যদি না জানা থাকে তাহলে
জেনে নিন। বাস্তবে সিনেমার শ্যুটিং যেভাবে করা হয় ঠিক সেভাবেই মানুষ অভিনয়
করে। তাদের শরীরে অনেকগুলি সেন্সর লাগানো থাকে। মোশান ক্যাপচার ডিভাইস
নামের বিশেষ ক্যামেরা ব্যবহার করে অভিনেতার নড়াচড়া রেকর্ড করা হয়। তারপর
তাকে ব্যবহার করা হয় থ্রিডি মডেলে। ফলে এনিমেশনের চরিত্রকে বাস্তব মানুষের
মতই অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা যায়।
মোশান
ক্যাপচার এর সাথে বহু টাকার যন্ত্রপাতির বিষয় জড়িত। পৃথিবীর অল্প কিছু
ষ্টুডিওতে এগুলি ব্যবহার করা হয়। আপনার জন্য পথ হচ্ছে এনিমেশনের কাজ হাতে
করা। যদি থ্রিডি ক্যারেকটার এনিমেশন করতেই চান, মডেল তৈরী করতে পারেন
জেড-ব্রাশে। এনিমেশনের কাজ ম্যাক্স কিংবা মায়ায় করলে বেশি সুবিধে পাবেন।
প্রসংগত জানিয়ে রাখি অটোডেস্কের (ম্যাক্স এবং মায়ার নির্মাতা) মাডবক্স নামে একটি সফটঅয়্যার আছে যা এই পদ্ধতিতে কাজ করে।
No comments:
Post a Comment