সত্যজিত রায় তার প্রথম গল্প লিখেছিলেন ইংরেজিতে। নাম এবষ্ট্রাকশন। বিষয় একজন চিত্রশিল্পী। শুরুতে তাকে দেখা যায় খবরের কাগজ হাতে। সেটা যে উল্টোদিকে ধরা সেটাও লক্ষ্য করেননি। শির্পীরা মনভোলা হন এটাই স্বাভাবিক। আসলে তিনি একটি ছবি আকা নিয়ে চিন্তিত।
এক প্রদর্শনীর জন্য তিনি ছবি আকছেন। তার নিজেরই খুব পছন্দ হল আকার পর। সেটা প্যাকেট করে পাঠিয়ে ঘরে ফিরলেন। কয়েকদিনের অগোছালো ঘর পরিস্কার করতে গিয়ে তার চক্ষুস্থির। তার ছবিটা পরে রয়েছে চেয়ারের নিয়ে। ভুল করে অন্যকিছু পোষ্ট করে এসেছেন।
বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে তিনি পরবর্তী কয়েকদিন কাটালেন। একদিন প্রদর্শনীতে গেলেন তেমন আগ্রহ ছাড়াই। পুরো প্রদর্শনী ঘরে দেখলেন। সবশেষে এসে দাড়ালেন একেবারে শুরুতে পুরস্কার পাওয়া যে ছবি রয়েছে তার সামনে। তিনি বুঝলেন না সেটা কিসের ছবি। একসময় দৃষ্টি গেল শিল্পীর নামের দিকে, তার নিজের নাম লেখা।
তিনি কিছুতেই মনে করতে পারলেন না কখন এই ছবি একেছেন। এরপর হঠাত করে চিনলেন ছবিটাকে। যে কাগজে তিনি রং পরীক্ষা করতেন এটা সেই কাগজ। ছবির বদলে ভুলে এটাকেই তিনি পাঠিয়েছেন।
এটা গল্প। বাস্তবে এমন ঘটনা খুব কম নেই। সবচেয়ে বড় উদাহরন নিশ্চয়ই সালভাদর দালি। ব্যঙ্গচিত্র এবং বিমুর্তচিত্র দুবিষয়েই তিনি বিশ্বখ্যাত। তিনি একেছেন একথা শুনলেই বহু দামে ছবি বিক্রি হয়। তার বিমুর্ত ছবি আকার বর্ননা দিয়েছেন একজন গৃহকর্মী।
ক্যানভাস ঠিক করলেন। বন্দুকে বিভিন্নরকম রং ভরলেন। কয়েক পা দুরে দাড়ালেন। গুলি ছুড়লেন। দুম। হয়ে গেল ছবি।
ধারনা করতে পারেন এই ছবির টাকা গুনে তিনি যতটা খুশি হয়েছেন তারচেয়ে বেশি মজা পেয়েছেন যখন তার ছবির নানারকম ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
আপনি যখন গ্রাফিক ডিজাইনার তখন খুবই সম্ভাবনা এধরনের পরিস্থিতির সামনে পরার। একটা উদাহরন দেখা যাক। ষ্টিভ জবস সম্পর্কে প্রচলিত গল্প, তিনি পুরনো কিছু যন্ত্রপাতি কিনে পরিত্যক্ত এক গ্যারেজে ল্যাবরেটরী চালূ করেছিলেন। সেখানে বসে একদিন কোম্পানীর চিন্তা করেন। কি নাম দেবেন ভাবতে গিয়ে হাতের আধখাওয়া আপেলের নামটাই পছন্দ হল।
বর্তমানের হিসেব আলাদা। কেউ লোগো ডিজাইন করতে বলার সময় সরাসরি বলে বসেন এপলের মত লোগো চাই। একজন বিশ্লেষক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিলেন, প্রযুক্তির প্রতিক হিসেবে আপেলের সাথে কোনকিছুর তুলনাই হয় না। এই আপেলের কারনে আদম-ইভ স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে এসেছেন। এই আপেলের কারনে নিউটন মাধ্যাকর্ষন সুত্র আবিস্কার করেছেন।
আমি নিশ্চিত, কোন প্রযুক্তি কোম্পানীর লোগো ডিজাইনের সময় যদি ফলের ছবি ব্যবহার করেন তিনি ধমকে উঠবেন, প্রযুক্তির সাথে ফলের সম্পর্ক কি ?
ফেসবুকের মত লোগো আকলে বললেন, আমার ৬ মাসের ছেলে এরচেয়ে ভালো পারে।
আপনি যখন লোগো ডিজাইনার তখন এই বিষয়গুলিকে এড়িয়ে যেতে পারেন না। আপনাকে যখন ক্রমাগত বলা হচ্ছে এপলের মত লোগো চাই, ফেসবুকের মত লোগো চাই, নাইকের মত লোগো চাই, তখন আপনি বিভ্রান্ত হবেন এটাই স্বাভাবিক।
এক ব্যক্তি নাকি ষ্টুডিওতে গিয়ে বলেছিলেন, এমনভাবে ছবি উঠান যেন নায়করাজ রাজ্জাক মনে হয়। তিনি তারহাতে রাজ্জাকের ছবি দিয়ে বলেছিলেন, নিচে নিজের নাম লিখে নিন।
একাজ করলে আপনি নিজে মজা পেতে পারেন, টাকা পাবেন না।
সমাধান খুজতে পারেন এভাবে। তিনি কি বলেছেন সেকথা ভুলে যান। নিজেই ভাবুন কিভাবে ভাল লোগো ডিজাইন করা যেতে পারে। কি ভেবে সেটা একেছেন তাকে জানান। এতে যদি কাজ না হয় ডিজাইন রেখে দিন। অন্যকেউ পছন্দ করবেন। শিবরামের সেই গল্পের কথা মনে করতে পারেন। তেল কিনেছেন চুল ওঠা বন্ধ করার জন্য। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন মাথার সমস্ত চুল পরচুলার মত খসে গেছে।
কি আর করবেন। একজন বাতব্যথার রোগির কাছে বাকি তেলটা বিক্রি করে দিলেন।
এই লেখা পড়ে মনে হতে পারে লোগো ডিজাইনের জন্য খুব বেশি ভাবার প্রয়োজন নেই। এটা ভুল ধারনা। দক্ষ লোগো ডিজাইনার নির্দিষ্ট বক্তব্য প্রকাশের জন্য ডিজাইন করেন। এজন্য নানারকম হিসাবের ব্যবস্থা রয়েছে।
এবিষয়ে তথ্য পাবেন আগামীতে।
No comments:
Post a Comment