Monday, January 12, 2015

Accurate Pregnancy Planning প্রেগন্যান্সির সঠিক প্ল্যানিং

গর্ভকালীন সময়ে বুক জ্বালাপোড়া সমস্যায়

সন্তান ধারণের জন্য শারীরিকভাবে সবচাইতে উপযোগী বয়সটা ২১-৩৫ বছরের কোঠায়। বিয়ের পর এই বয়সসীমায় সুবিধামতো
খানিকটা সময়



নিয়ে সন্তান ধারণ করাটাই যুক্তিযুক্ত। প্রথম সন্তানটি ৩০-এর মার্জিন পেরোনোর আগেই জন্ম দেওয়া ভালো এবং নিরাপদ সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় সন্তানের ক্ষেত্রে এই সীমারেখাটা ৩৫-এর মধ্যে থাকাটাই বেটার। ৩০-এর পর বিয়ে হলে সন্তান নেওয়ার জন্য আর কোনো রকম দেরি না করাই নিরাপদ।
পূর্বপ্রস্তুতি
* প্রি-প্রগন্যান্সি কাউন্সিলিং ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চা নেওয়ার পরিকল্পনা করারও অন্তত ছয় মাস আগে থেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কাউন্সিলিংয়ের সময় আপনার স্বামীকেও সাথে রাখুন।
* কিছু প্রয়োজনীয় টেস্ট আগে করে নেওয়া ভালো। যেমন: থ্যালাসিমিয়া স্ক্রিনিং ব্লাড টেস্ট, রুবেলা স্ক্রিনিং টেস্ট ও জরুরি ভ্যাক্সিনেশন। এই টেস্টগুলো
করানোর তিন মাস পর প্র্রেগন্যান্সি প্ল্যান গ্রহণ করাটা জরুরি। এর বাড়তি উপকারিতাও রয়েছে। লেট প্রেগন্যান্সির জন্য যে শারীরিক নানা জটিলতা তৈরি হয়, সেসব সমস্যার সমাধানও বাতলে দেন বিশেষজ্ঞরা।
* লেট প্রেগন্যান্সির কারণে শিশুদের জিনঘটিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডাউনস সিনড্রোমটাই বেশি প্রকট হয়। তাই প্রেগন্যান্সির আগে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় টেস্ট সেরে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। এ ছাড়া সন্তান নিতে আগ্রহী মায়ের হার্ট, ব্রেন ও কিডনি কতটা সুস্থ, সেটাও এই টেস্টে ধরা পড়বে। সন্তান ধারনের জন্য কতটা কার্যক্ষম, তা জানার জন্য মায়ের ব্লাড সুগার, কিডনি, থাইরয়েড পরীক্ষা করে দেখে নেওয়া দরকার। হবু মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কতটা শক্তিশালী, তাও মেডিকেল চেকআপের মাধ্যমে জেনে নিতে হবে।
পূর্বলক্ষণ
সাধারণভাবে নিচের লক্ষণগুলো সদ্য প্রেগন্যান্ট মহিলাদের শরীরে দেখা দেয়। তবে এর সবই ম্যান্ডেটরি নয়।
১.    পিরিয়ড বন্ধ হওয়া। তবে মনে রাখা ভালো, এটি কিন্তু প্রেগন্যান্সির একমাত্র লক্ষণ নয়।
২.    এ সময় ব্রেস্টের নিপলস সাধারণত নরম হয়ে ফুলে যায় এবং অল্প ব্যথা অনুভূত হয়।
৩.    ঘুম ঘুম ভাব কাজ করে। সঙ্গে অল্পতেই ক্লান্তি, অবসন্নতা পেয়ে বসে।
৪.    বমি বমি ভাব। কিছু কিছু জিনিস বা খাবারের গন্ধ সহ্য না হওয়া।
৫.    তলপেটে ফোলা ভাব।
৬.    বারবার প্রস্রাব পাওয়া।
উল্লেখ্য, সব ক্ষেত্রে এই পরিবর্তন বা লক্ষণগুলো নির্দিষ্ট করে নাও দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে গাইনোকলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
হোম প্রেগন্যান্সি কিট
মনের মধ্যে খুঁতখুঁতানি এলে বাড়িতেই হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট করে নিশ্চিত হতে পারেন। হোম প্রেগন্যান্সি টেস্ট কিট বড় ধরনের যেকোনো ওষুধের দোকানেই কিনতে পাওয়া যায়। পিরিয়ড মিস হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে সকালের প্রথম ইউরিনের দুই ফোঁটা এই টেস্ট কিটের ভেতরের টেস্টিং স্টিকের নির্দিষ্ট জায়গায় ফেললেই বোঝা যাবে আপনি প্রেগন্যান্ট কি না। কিট বক্সের ভেতরেই ব্যবহারের নির্দেশিকা রয়েছে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ল্যাবরেটরিতেও ইউরিন টেস্ট করিয়ে নিতে পারেন। অনেক সময় প্রেগন্যান্সি এলেও রেজাল্ট নেগেটিভ দেখাতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
আগমনী সংবাদ পাওয়ার পর প্রথম তিন মাস (ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার)
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস বা প্রথম ১২ সপ্তাহের সময়কে বলা হয় ফার্স্ট ট্রায়মেস্টর। সময়টা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
যা যা করণীয়
৭.    এ সময় শরীরে একসঙ্গে নানাধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। ভ্রূণ বা ফিটাসের বৃদ্ধির জন্য এই সময়টা খুবই জরুরি। হার্ট, ব্রেন, মাথা, হাত, পায়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রথম তিন মাসেই তৈরি হয়ে যায়। এই সময় জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তনের উপযুক্ত সময়।
৮.    কনসিভ করার নয় সপ্তাহের মধ্যে প্রথম প্রি নেটাল চেকআপ করানো।
৯.    ব্যায়াম খুব প্রয়োজনীয়। ফিট থাকতে সাধারণ ব্যায়াম করা যেতে পারে।
১০.    দিনে অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।
দ্বিতীয় তিন মাস (সেকেন্ড ট্রাইমেস্টার)
প্রথম দিকে মায়ের শরীরে যে সমস্যা বা লক্ষণগুলো দেখা দিয়েছিল, সেগুলো আস্তে আস্তে কমে আসবে। তুলনামূলক সুস্থ স্বাভাবিক বোধ হবে। এই সময় থেকেই কিন্তু বাইরে থেকে প্রেগন্যান্সি বোঝা যেতে শুরু করে। কারণ ভ্রণের আকার ও ওজন দ্রুতগতিতে বাড়তে শুরু করে। এ সময় ভ্রণের দৈর্ঘ্য ছয় সেন্টিমিটারের কাছাকাছি হয় এবং শেষের দিকে প্রায় একটা পূর্ণাঙ্গ শিশুর আকার ধারণ করে।
যা যা করণীয়
১১. মায়ের ওজন এই সময় বেশ খানিকটা বেড়ে যায়। হাঁটাচলা, ওঠ-বস, শোয়ার অভ্যাসে এ সময় থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
১২. প্রচুর পানি পান করতে হবে।
১৩. এই সময় সাধারণত পা ফুলে যায়, সেজন্য পা দুটোকে যথেষ্ট বিশ্রাম দিতে হবে। প্রয়োজনে সোফা বা চেয়ারের সামনে একটা ছোট টুল রেখে তার ওপর পা তুলে বিশ্রাম করা উচিত।
১৪. হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে বুকিং করে রাখা ভালো।
১৫. বিনোদনের জন্য এ সময় মজার সিনেমা দেখা, গান শোনা, বই পড়া উচিত।
১৬. সম্প্রতি মা হয়েছেনÑএমন কারো সঙ্গে চিন্তাভাবনা শেয়ার করে টিপস ও আইডিয়া নেওয়া যেতে পারে।
শেষের তিন মাস (থার্ড ট্রাইমেস্টার)
এই সময়কালটি প্রেগন্যান্সির ফাইনাল স্টেজ হিসেবে ধরা হয়। গর্ভে থাকা ভ্রƒণ প্রায় ১র্র্৯র্  থেকে ২র্১র্  লম্বা হয়ে যায়। ওজন বেড়ে দাঁড়ায় ৬ পাউন্ড থেকে ৯ পাউন্ড। এ সময় ধীরে ধীরে ভ্রƒণের মাথা জরায়ুর নিচের দিকে ঘুরে যায়।
যা যা করণীয়
১৭.  এ সময় ভ্রূণের তাপমাত্রা মায়ের শরীরে ছড়িয়ে পড়ায় মায়ের একটু বেশি গরম লাগে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
১৮. শারীরিক পরিবর্তন যেহেতু অনিবার্য, তাই সারা দিন খুব ক্লান্ত লাগতে পারে। পর্যাপ্ত বিশ্রাম খুব দরকার। ঘুমানোর সময় পাশ ফিরে শোওয়া উচিত। সাপোর্টের জন্য দুই পায়ের মাঝে এবং পেটের তলায় মোটামুটি বড় ও নরম বালিশ রাখা যায়।
১৯. পিঠে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। বসার সময় পিঠের নিচের দিকে বালিশের সাপোর্ট নিন। এ সময়ে (শিশুর জন্মের আগেই) মায়ের নিপলস থেকে ফোঁটা ফোঁটা হলুদ দুধ (কোলোস্ট্রাম) গড়িয়ে পড়তে পারে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাপোর্টিভ ব্রা পরলে কিছুটা ভালো লাগবে।
২০. ডেলিভারির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে।
খাওয়া-দাওয়া
২১. ব্যালেন্সড ডায়েট প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। এই সময় শরীরে ক্যালসিয়াম ও আয়রন প্রয়োজন। এ জন্য সবুজ শাকসবজি, লাল ছোলা, কাঁচকলা, পালংশাক, শুকনো ফল, ছোট মাছ, কলিজা যেন অবশ্যই খাদ্য তালিকায় থাকে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। লোহার কড়াইয়ে রান্না করুন। ক্যালসিয়ামের জন্য দুগ্ধজাত সামগ্রী যেমন: দুধ, দই, ছানা,পনির খেতে পারেন।
২২. ফ্যাটি ফুড এড়িয়ে চলতে হবে। রান্নার সময় তেল ও ঘিয়ের পরিমাণ কম রাখুন। ফ্যাটি ফুড রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়ে ভ্রƒণের ক্ষতি করতে পারে।
২৩. চিকিৎসকেরা ফলিক অ্যাসিড নামক ভিটামিন প্রেগন্যান্সির আগে থেকে খেতে বলেন। প্রেগন্যান্সির ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত এই ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট খেতে হতে পারে। সবুজ শাকসবজি ও লেবুজাতীয় ফলেও ফলিক অ্যাসিড থাকে। চা, কফি, সফট ড্রিংকস এবং চকোলেটÑপ্রতিটির মধ্যেই ক্যাফিন রয়েছে। ক্যাফিনযুক্ত পানীয় খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দিনে দুই কাপের বেশি চা বা কফি না খাওয়াই ভালো।
২৪. এই সময় কনস্টিপেশনের সমস্যা দেখা যায়। ফাইবার এই সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে। ডায়েটে তাই ফাইবার-জাতীয় খাবার যেমন: শাকসবজি, খোসাসুদ্ধ ফল অবশ্যই রাখতে হবে। সেই সঙ্গে বেশি পরিমাণে পানি খেতে হবে।
২৫. খালি পেটে থাকবেন না। যতবার ইচ্ছে, ততবারই খান। একবারে বেশি না খেয়ে বারবার অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়া হলো।
২৬. কনসিভ করার পর শুরুর দিকে মর্নিং সিকনেসের সমস্যা থাকে। এটা কাটাতে সকালে বিছানা ছাড়ার আগেই দু-একটা বিস্কুট বা সামান্য মুড়ি চিবিয়ে একটু পানি খেয়ে নেওয়া ভালো। যা যা খেতে ভালো লাগে, সেগুলোই পরিমাণমতো এবং বিরতি দিয়ে দিয়ে খাওয়া উচিত। অবশ্য ইচ্ছে হলো আর দেদারসে ফাস্ট ফুড খেয়ে গেলেন, সেটা মোটেই সুবিধের বিষয় হবে না; খেতে হবে একটু রয়ে-সয়ে। বমি, কনস্টিপেশান, বুক-গলায় জ্বালাপোড়া বা অরুচির মতো সমস্যাগুলোর সাথে পেরে ওঠার জন্য ওষুধ নয়, হালকা আর সহজপাচ্য খাবার গ্রহণ করাই ভালো।
২৭. মাথায় রাখতে হবে, খাবারটা শুধু নিজের জন্য নয়, শরীরের অভ্যন্তরের ছোট্ট শিশুটির জন্যও। ওর কী দরকারি, সেটা তো মানতেই হবে। প্রোটিন-ভিটামিন-ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তার ক্যালকুলেশনটা তাই সব সময়ই মেনটেইন করতে হবে। আর বাড়তি খাবার তো খেতে হবেই।
২৮. ফলের রস বা স্যুপের মতো আইটেমগুলো তো সব সময়ই হিট, আবার শরীরের উপকারের জন্যও ফিট। রুচিমতো বুঝে-শুনে এই আইটেমগুলো নিয়মিত খাওয়াটা বেশ ভালোই হতে পারে।
২৯. ফিজিশিয়ানের কাছ থেকে একটা যুৎসই ডায়েট চার্ট করে এনে সেটা মেনে চলতে হবে। সারা দিনে কী কী খাচ্ছেন, তা একটি ডায়েরিতে লিখে রাখুন এবং এটি নিয়মিত মেনটেইন করুন।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন
৩০. বাড়ির বাইরে বা অফিসে কাজ করলে সাবধানে থাকতে হবে। অফিস কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে বাইরের কাজ একটু কমিয়ে নিন। এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে না থেকে মাঝেমধ্যে খানিকক্ষণ পায়চারি করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক থাকবে।
৩১. আগে অ্যাবরশন করে থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিছু বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৩২. এ সময়ে ভারী জিনিস একেবারেই তুলবেন না। বাড়ির কাজ করার সময় চেষ্টা করুন নিচু হয়ে কোনো কাজ যাতে না করতে হয়। একান্তই নিচু হতেই হলে হাঁটু ভেঙে সাবধানে বসে কাজ করুন।
৩৩. এ সময় রিকশায় চড়া বিপজ্জনক, তাই ছোট দূরত্বের জন্যও বাস বা গাড়ি ব্যবহার করুন।
৩৪. জাঙ্ক ফুডকে না বলুন। বাইরে খাওয়া একেবারেই কমিয়ে দিন। ভাজা-পোড়া খাবার ব্লাড প্রেশার বাড়ায়, যা মা-শিশু উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক।
৩৫. মেজাজ-মর্জি ঠিক রাখুন। ঘরে বাইরে স্ট্রেস সমঝে চলুন। প্রয়োজনে সহকর্মীদের কাছ থেকে সাহায্য নিন। একটানা কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
৩৬. অবসর সময়ে নিজেকে কোনো সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখুন। যে কাজগুলোর জন্য সাধারণত সময় করে উঠতে পারেন না, সেগুলো করার আদর্শ সময় কিন্তু এখনই। তবে কাজ করার সময় ক্লান্তি এলে সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রাম নিন।
৩৭.    ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া পেইন কিলার, অ্যান্টাসিড বা অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট-জাতীয় কোনো ওষুধ খাবেন না। এসব ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৩৮. ওবিসিটি থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ডায়েট চার্ট করুন।
চলাফেরার অভ্যাস যেমন হবে
৩৯.  এই নয়-দশ মাস লম্বা জার্নি যথাসম্ভব এড়িয়ে যান।
৪০.  যাতায়াতের ক্ষেত্রে রিল্যাক্সভাবে বসা এবং বসার ভঙ্গি কিছুক্ষণ পরপর বদলে ফেলা উচিত।
৪১.  সামনে ঝুঁকে কাজ করার প্রবণতা বাদ দিন। শিরদাঁড়া যতটা পারা যায় টানটান রাখাই নিরাপদ।
৪২.  স্যান্ডেলের বিষয়ে স্টাইলের চিন্তাটায় একটু বিরতি দিতেই হবে। হালকা, আরামদায়ক ও ওয়েল ব্যালান্সড স্যান্ডেল পরাটাই শ্রেয়তর।
৪৩. বাথরুমে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। যে ধরনের স্যান্ডেলগুলোতে পা সিøপ করার সামান্যতম আশঙ্কাও থাকে, সেগুলো দ্রুত বাতিল করে ‘নিরাপদ’ প্যাটার্নের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে হবে। আপনার বাথরুম যেন ব্যবহারের সময় শুকনো থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
ত্বকের যত্নে
৪৪.  অ্যালার্জিজনিত সমস্যাটা প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে বেশ কমন, বিশেষ করে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার কনসিভ করবার ক্ষেত্রে এই হারটা বেশি থাকে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ক্যালামাইন-জাতীয় লোশনে আরাম পাওয়া যেতে পারে।
৪৫. হারপিস জেস্টেশানিসের মতো স্কিন ডিজিজ মা এবং শিশু, দুজনেরই ভয়ংকর ক্ষতি করতে পারে। এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৪৮. যতটা সম্ভব হালকা-পাতলা সুতির পোশাক পরা উচিত। নখ কেটে ফাইল ঘষে নমনীয় রাখতে হবে, যাতে করে ত্বকে সামান্য আঁচড়, আঘাতও না লাগে।
৪৬. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, নিয়মমতো গোসল এগুলো তো করতেই হবে। তবে বেশি তেল, সাবান বা কসমেটিকস ব্যবহার না করাটাই ভালো। আর পারলারে গেলে হেভি কেমিক্যাল দেওয়া বিউটি ট্রিটমেন্ট করাবেন না। আর এ সময় চুল পার্ম বা ডাই করা বন্ধ রাখুন।
নাক-কান-গলার সমস্যায়
৪৭.  নাক দিয়ে পানি পড়া ও হাঁচির মতো সমস্যাগুলোর জন্য ধুলা-ধোঁয়া এড়িয়ে চলতে হবে। দরকার হলে গরম পানিতে গোসল, ফুটবাথ বা গার্গল করতে হবে।
৪৮. দাঁতের গোড়া থেকে ব্লিডিং বা মাড়ি ব্যথার ক্ষেত্রে গার্গলই সবচেয়ে উপকারী। হুট করে ওষুধ  খাওয়া শুরু করা যাবে না।
৪৯. গলা বা কানে ব্যথা, কম শোনা আর শোঁ শোঁ শব্দ হওয়ার মতো সমস্যাগুলোর ক্ষেত্রে এরিথ্রোমাইসিন বা পেনিসিলিন-জাতীয় নিরাপদ কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়।
সুস্থ হাসির জন্য
৫০. সঠিক নিয়মে দিনে তিনবার করে ব্রাশ করতে হবে। খাবার পরই মুখ কুলকুচি করে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
৫১. পান, জর্দা, চুন-জাতীয় নেশা থেকে দূরে থাকুন। এসব দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি করে।
৫২. ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ প্রচুর খাবার খেতে হবে। কারণ এ সময় শরীরে অতিরিক্ত ক্যালসিয়ামের দরকার পড়ে।
৫৩. মুখে কোনো রকমের সমস্যা বোধ করলে গরম পানিতে কুলকুচি ও গার্গল করতে হবে।
৫৪. দাঁতে কোনো রকমের সমস্যা বা ইনফেকশন হলেও ইচ্ছেমতো ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ট্রিটমেন্ট টিপস
৫৫. একজন ফিজিশিয়ানের কাছে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কনসাল্ট করুন। এ ক্ষেত্রে বোঝাপড়ার একটা বিষয় থাকে, যেটা অন্তত একজন চিকিৎসকের নিয়মিত পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে যেকোনো ধরনের সমস্যা ধরতে ও সারাতে ডাক্তারের যেমন: সুবিধা, মায়েদের জন্যও তেমনি কমফোর্টেবল।
৫৬. যেকোনো সমস্যা, কনফিউশন বা চিন্তা নিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। কোনো কিছুই এড়িয়ে যাবেন না বা কোনো কিছুই অবহেলা করবেন না।
৫৭. ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট মেনটেইন করতে হবে।
যেসব এক্সারসাইজ করা যায়
৫৮. বিশেষ কোনো সমস্যা বা অস্বাভাবিকতা না থাকলে প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।
৫৯. পিঠ ও কোমরের ব্যথার মতো কষ্টগুলো এড়াতে কিছু ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
৬০. এক্সারসাইজ নিয়ে কিছু ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে। যেমন: আগে এক্সারসাইজ করার অভ্যাস না থাকলে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় এটা এড়ানো উচিত। এর উল্টোটাই বরং সত্য। এক্সারসাইজ শুরুর জন্য প্রেগন্যান্সি বরং বেশ মোক্ষম একটা সময় বলা যায়।
৬১. মনে রাখবেন, প্রেগন্যান্সির সময় ঠিকমতো এক্সারসাইজ করলে প্রেগন্যান্সি-সংক্রান্ত জটিলতার হার কমে যায়। এক্সারসাইজের মাধ্যমে পরে ওজন অতিরিক্তবেড়ে যাওয়ার মতো ঝামেলাগুলো থেকেও নিষ্কৃতি পাওয়া যায়।
৬২. লেট প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে ব্যথা (হাঁটু, কোমর ইত্যাদি) কমাতে এবং শরীরের বাড়তি ওজনের প্রেশার থেকে রিলিফ দিতে সাঁতারের জুড়ি নেই। পানিতে ভাসার বিদ্যাটা জানা থাকলে সময় করে নিয়মিত খানিকটা সাঁতরে নিতে ভুলবেন না।
দূরে থাকুক বদভ্যাস
৬৩. সিগারেট ও হার্ড ড্রিংকস থেকে এক শ হাত দূরে থাকতে  হবে।
৬৪. প্যাসিভ স্মোকিংয়ের ক্ষতিটা ডিরেক্ট স্মোকিংয়ের থেকে কোনো অংশে কম নয়। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
৬৫. এ সময়টায় স্ত্রী ও স্বামী দুজনকেই ধূমপান এবং মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। এগুলোর প্রভাব সরাসরি সন্তানের ওপর গিয়ে পড়ে।
৬৬. পরিবারে বা কর্মক্ষেত্র যেখানেই হোক না কেন, একজন প্রেগন্যান্ট মা অবশ্যই তার সামনে যে কাউকে স্মোক বা ড্রিংক করতে নিষেধ করবেন। এ ব্যাপারে কোনো রকম আড়ষ্টতা, ভয়-ভীতি বা কম্প্রোমাইজ করা চলবে না।
সেক্সারসাইজ
৬৭.  প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কখনোই সহবাস করা যাবে না এটিও একধরনের ভ্রান্ত ধারণা। বিশেষ কোনো শারীরিক সমস্যা বা ঝামেলা না থাকলে কনসিভ করার পর প্রথম দুই মাস এবং শেষের মাস ছাড়া পুরোটা সময়েই সহবাস নিরাপদ।
৬৮.  তবে সেক্স-পজিশন নিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পেটে চাপ লেগে গেলে খানিকটা  ঝুঁকির আশঙ্কা থেকে যায়। এই বিষয়টা মাথায় রেখে স্পেসিফিক ও সেফ পজিশনে সহবাস করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াটা ভালো।
৬৯.    গর্ভাবস্থায় শারীরিক মিলনের ক্ষেত্রে সব সময় কনডম ব্যবহার করা উচিত। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ থেকে ইউটেরাস নিরাপদ থাকে। একই সঙ্গে ইউটেরাইন কন্ট্রাকশান বা হঠাৎ ব্লিডিং হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম থাকে।
প্রেগন্যান্সি রুটিন চেকআপ
৮-১২ সপ্তাহ : আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে ইউটেরাসের মধ্য স্থিত শিশুর অবস্থান এবং বৃদ্ধি-পরীক্ষা করা যায়।
১১-১৪ সপ্তাহ : বিশেষ স্ক্যান ও মায়ের রক্তপরীক্ষার মাধ্যমে (কম্বাইনড টেস্ট অব ডিটেকশন অব ফিটাল ক্রোমোজমাল অ্যানোম্যালি) ভ্রূণের ক্রোমোজমগত ত্রুটি আছে কি না, তা বোঝা যায়।
১৮-২২ সপ্তাহ : আলট্রাসাউন্ড স্ক্যানের মাধ্যমে ভ্রƒণের কোনো শারীরিক অসংগতি আছে কি না, পরীক্ষা করা হয়। এ ছাড়া প্ল্যাসেন্টর পজিশন ভালো করে দেখে নেওয়া হয়। এই সময়ে ব্লাড টেস্টের মাধ্যমে ব্লাড গ্রুপিং আর এইচ ফ্যাক্টর, হিমোগ্লোবিন, থাইরয়েড, ক্রিয়েটিনিন, ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা হয়। ভাইরাল স্ক্রিনিংও এই সময়ে করা হয়।
২৮-৩২ সপ্তাহ : গর্ভস্থ শিশুর শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা জানার জন্য ডিটেলড আলট্রাসাউন্ড টেস্টিং করা হয়। এ ছাড়া আরও একবার ব্লাড এবং ইউরিন পরীক্ষা করা হয়। এ সময় আর্লি অনসেট অব ইন্ট্রাইউটেরাইল গ্রোথ রেস্ট্রিকশন অব দ্য বেবি হচ্ছে কি না, তা বোঝা যায়।
৩৬-৪০ সপ্তাহ : প্রয়োজন হলে ইউএসজির মাধ্যমে জরায়ুতে শিশুর বৃদ্ধি এবং প্ল্যাসেন্টার পজিশন ভালো করে বুঝে নেওয়া হয়।
যেসব ক্ষেত্রে গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ
* মায়ের বয়স যখন ১৮ বছরের কম অথবা ৩৫-এর বেশি।
* মায়ের উচ্চতা র্৪র্৬র্ -এর কম হলে।
* আগে অ্যাবরশন করিয়ে থাকলে।
* আগেরবার প্রি-টার্ম ডেলিভারির কারণে যদি স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের বাচ্চা হয়ে থাকে বা আগের সন্তানের ক্রোমোজোমাল অ্যাবনরম্যালিটি থাকলে।
* স্থূলকায় মায়েদের জন্য ঝুঁকি একটু বেশি। মা স্থূলকায় কি না, তা বোঝার জন্য মায়ের উচ্চতা এবং ওজনের স্বাভাবিক অনুপাত বা বডি মাস ইন্ডেক্স দেখতে হবে।
* হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হার্ট বা কিডনির অসুখ, অ্যাজমা বা এপিলেপসি থাকলে।
* রক্তস্বল্পতা থাকলে।
* নেশায় আসক্তি থাকলে।
* এইচআইভি সংক্রমণ থাকলে।
* রক্তের আরএইচ ফ্যাক্টর নেগেটিভ হলে।
উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ প্ল্যানিং
৭০.  প্রথম থেকেই বাড়ি এবং কর্মস্থলে আপনার প্রেগন্যান্সির কথা জানান, এতে করে নিজের চারপাশে একটা সাপোর্ট সিস্টেম গড়ে উঠবে।
৭১.  আগে থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট খেতে শুরু করুন। এটি অনাগত সন্তানের নিউরাল টিউবের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। আর ১৬ সপ্তাহ থেকে খাওয়া শুরু করুন আয়রন ট্যাবলেট। এ সময় টিটেনাস টক্সয়েড ইনজেকশনও নিতে হবে।
জরুরি সময়ে
৭২.  গর্ভাবস্থায় তলপেটে অসহ্য ব্যথা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
৭৩.  ভ্যাজাইনাল ব্লিডিং এবং তরল ডিসচার্জ দেখা দিতে শুরু করলে ডাক্তারকে জানান।
৭৪.  শেষের দিকে কোনো সময় জরায়ুতে শিশুর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেছে মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৭৫.  মেডিকেল এমার্জেন্সির মধ্যে বড় ধরনের অসুখ যেমন: হাই ফিভার, ছোঁয়াচে রোগ ইত্যাদিও পড়ে। এ রকম হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
ডেলিভারি দিনের প্রস্তুতি
৭৬. ছোটখাট ঘরোয়া আড্ডার আয়োজন করতে পারেন। কারো সাহায্য নিয়ে বেডরুমের লুকটাও বদলে দেওয়ার চেষ্টা করা যায়। আগে-ভাগেই বাড়িতে একজন অভিজ্ঞ আয়া নিয়ে আসুন। সাধারণত তৃতীয় বা চতুর্থ মাসেই ডাক্তাররা এক্সপেকটেড ডেলিভারি ডেট জানিয়ে দেন। তখন থেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হাসপাতাল বা নার্সিং হোমের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করুন। আগে থেকে খোঁজ নিয়ে বা সশরীরে গিয়ে জেনে নিন ডেলিভারির পেমেন্ট প্যাকেজ, হাসপাতালের সুবিধা, সেবা, ব্যবস্থাপনার অবস্থা ইত্যাদি।
৭৭. ডেলিভারি ডেটের দুই-তিন মাস আগে অফিসের সঙ্গে মেটার্নিটি লিভ-সংক্রান্ত কথাবার্তা বলে রাখুন। ডক্টরস সার্টিফিকেট অ্যাটাচ করে ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষ বা হিউম্যান রিসোর্স ডিপার্টমেন্টকে চিঠি দিয়ে নিজের প্রেগন্যান্সির কথা জানান। জমানো ছুটির হিসাব বুঝে নিন, ডেলিভারির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে শুরু করুন। যেকোনো খটকায় বা প্রয়োজনে চিকিৎসককে দ্বিধাহীনভাবে প্রশ্ন করুন। সিজারিয়ান ডেলিভারির সময়ে ঠিক কী ঘটে, তার জন্য আপনি ও পরিবারের সদস্যরা কীভাবে প্রস্তুত থাকতে পারেন, সে বিষয়ে কিছু পরামর্শ নিন।
৭৮. যত্ন করে গুছিয়ে রাখুন মেডিকেল ফাইলগুলো। হাসপাতালে ভর্তির সময় এগুলোর দরকার হবে। প্রথম চেকআপ থেকে মেডিকেল টেস্ট যা যা করিয়েছেন এবং যেসব টিকা নিয়েছেন, তার প্রতিটি রিপোর্ট তারিখ অনুযায়ী ফাইলে গুছিয়ে রাখুন। ডাক্তারের নাম, ঠিকানা, যাবতীয় ফোন নম্বর ইত্যাদির পরিষ্কার করে লিখে ফাইলের শুরুতে রাখুন।
৭৯.  হাসপাতালে ভর্তির তারিখ ফাইনাল হওয়ার পরপরই একটি গাড়ির বন্দোবস্ত করে রাখুন। ব্যক্তিগত গাড়ি হলে তো ভালোই। তা না থাকলে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা রাখুন। ভুলেও নিজে ড্রাইভ করার কথা মাথায় আনবেন না। ড্রাইভার ঠিক করুন আর দিন-রাত যেকোনো সময় তাকে প্রয়োজন হতে পারে বলে তাঁকে নির্দেশনা দিয়ে রাখুন। ভাড়া করা গাড়ির ক্ষেত্রে প্রয়োজনের সময় যাতে সঙ্গে কাছের কেউ থাকে, সেটি নিশ্চিত করুন। আপনার স্বামী থাকলে তো কথাই নেই। তবে এ সময় মা বা তেমন কেউ পাশে থাকলে ভালো হয়। যে থাকবে আপনার সাথে, তাকে মেডিকেল ফাইলের যাবতীয় ছোটখাটো বিষয়গুলো বুঝিয়ে দিন। সঙ্গে ডাক্তারের ঠিকানা ও  ফোন নম্বরও জানিয়ে রাখুনএমার্জেন্সির সময় কাজে লাগবে।
হাসপাতালে যাওয়ার আগে
৮০. আরামদায়ক নাইটি নিয়ে নিন সাথে। তাতে সূতির ও ফ্রন্ট ওপেনিংয়ের সুবিধা থাকলে ভালো। এ ছাড়া ডাক্তারের অনুমতি সাপেক্ষে নিজের পোশাক পরতে পারেন।
৮১. সন্তান জন্মানোর পর তাকে ব্রেস্টফিড করার জন্য একধরনের মেটার্নিওয়্যার কিনতে হবে। নিয়ে নিন অর্ন্তবাস এবং গ্রিপ দেওয়া বাথরুম ফ্লিপফ্লপ বা সিøপার। ভারী হয়ে যাওয়া স্তনকে উপযুক্ত সাপোর্ট দেওয়া এবং বাচ্চাকে ফিড করানোর জন্য নার্সিং প্যাড-লাগানো ব্রা আগেই কিনে ফেলুন। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সাথে নিয়ে নিন। চশমা থেকে শুরু করে হাতঘড়ি, নিজের মেডিকেল ফাইল, প্রয়োজনীয় ওষুধ, মোবাইল ফোন, চার্জার, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এবং একটি ফোটো আইডেনটিটি কার্ড।
৮২. একে একে একটি ব্যাগে বা পাউচে টয়লেট্রিজ সামগ্রীগুলো যেমন: চিরুনি,  টুথব্রাশ, টুথপেস্ট, লিপ বাম, লিক্যুইড সোপ, শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, নাইটক্রিম, হেয়ার ব্যান্ড বা ক্লিপ নিয়ে নিন। সময় কাটানোর জন্য বইয়ের সাথে ম্যাগাজিন নিন। মিউজিক প্লেয়ার বা আইপড নিতে পারেন গান শোনার জন্য। প্রেগন্যান্সি-সংক্রান্ত কোনো হ্যান্ডবুক থাকলে পড়ার জন্য নিতে পারেন।
যেমন হবে মাতৃত্বকালীন পোশাক
৮৩. নিজের পছন্দের সাথে সুবিধা-অসুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে জামাকাপড় বেছে নিন।
৮৪. প্রেগন্যান্সির জন্য একটু বড় সাইজের ব্রা এবং প্যান্টি কিনে রাখুন। মেটারনিটি লঞ্জেরি একটি ভালো অপশন হতে পারে। বিবেচনায় নিতে পারেন স্পোর্টস ব্রা।
৮৫.     সুতির পোশাক আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যকর। সিনথেটিক এড়িয়ে চলুন।
৮৬.     ফ্ল্যাট, কমফোর্টেবল চপ্পল পরুন। হাই হিল একেবারে না পরাই উচিত।
শেষ মুহূর্তে
৮৭. সেকেন্ড টাইম প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে যদি আপনাকে কিছুদিন হাসপাতালে থাকতেই হয়, তবে প্রথম সন্তানের সাথে নিয়মিত ফোনে কথা বলুন। নতুন অতিথির প্রতি তার দায়িত্বগুলো বুঝিয়ে বলুন। আপনার অনুপস্থিতিতে বাড়ি দেখভালের দায়িত্ব কোনো বিশ্বস্ত লোকের ওপর দিয়ে আসুন। আর সন্তান দেখাশোনার জন্য কোনো আত্মীয়কে বাসায় নিয়ে আসতে পারেন অথবা আত্মীয়ের বাড়িতে বাচ্চাকে কয়েক দিনের জন্যে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন।
৮৮. আগে থেকেই কিনে রাখুন নিউবর্ন ডায়াপার, অ্যান্টিসেপটিক লিক্যুইড, ডিটারজেন্ট পাউডার প্রভৃতি।
মা হওয়ার পর
৮৯. প্রেগন্যান্সির পর গর্ভনিরোধক হিসেবে সাধারণত প্রজেস্টরন ওনলি পিন প্রেসক্রাইব করা হয়। কারণ কম্বাইনড পিল খেলে ব্রেস্ট ফিডিংয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা যায়।
৯০.    বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে প্রেগন্যান্সির সম্ভাবনা থাকে নাÑএমন ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। বাচ্চা হওয়ার ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে কনসিভ করার যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। পোস্ট প্রেগন্যান্সি সময়ে কনট্রাসেপটিভ পিল ব্যবহার করতে পারেন। কারণ ব্রেস্ট ফিডিংয়ের সময় যেহেতু অনেকের পিরিয়ড বন্ধ থাকে, তাই অজান্তেই কনসিভ করে ফেললে বুঝতে পারা যায় না। ডাক্তারের পরামর্শে উপযোগী গর্ভনিরোধক পিল খেতে শুরু করুন।
ডার্মাটোলজিস্ট
ড. মো. রোকনউদ্দিন
অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর

প্রশ্ন: গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া কীভাবে লক্ষ রাখবেন?

উত্তর: গর্ভধারণের পাঁচ মাস পর থেকে সাধারণত একজন মা গর্ভস্থ শিশুর নড়াচড়া খেয়াল করতে পারেন। তবে ৩০ সপ্তাহের পর থেকে নিবিড়ভাবে এই নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়। এ জন্য মা সারা দিন কাজের মধ্যেই এবং দুপুর বেলা ডান কাতে শুয়ে নড়াচড়া গুনবেন। দিনে ১০ বারের বেশি নড়াচড়া বুঝতে পারলে মোটামুটি নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। তবে দু-এক ঘণ্টার মধ্যেই শিশু ১০ থেকে ২০ বার নড়লে আর গোনার দরকার নেই।
ডা. রোনা লায়লা
বারডেম হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৩
++8801911023611
MD HELAL

No comments:

Post a Comment