Monday, January 26, 2015

Orbit কক্ষপথ

 কক্ষপথ

 2011-01-08_205450

প্রাচীনকালে কিছু মানুষ বিজ্ঞান নিয়ে অনেক কিছুই কল্পনা করেছে, কল্পকাহিনী লিখেছে যেগুলো বেশিরভাগই ছিল আজগুবি, বানোয়াট। এরকমই একজন লেখক ও বিজ্ঞানী ২০৪৪ সালের দিকে কল্পনা করে বসলেন যে, ৩০৪৮ সালের দিকে পৃ্থিবীর মতই আরেকটি গ্রহ পৃ্থিবীর অক্ষরেখায় চলে আসবে যেখানে মানুষের মতই কিছু প্রাণী থাকবে এবং দুই গ্রহের মুখোমুখি সংঘর্ষে পৃ্থিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ২০৩৬ সালের দিকে কিছু উল্কাপিন্ড যেমন
পৃথিবীর অক্ষরেখায় এসে পড়েছিল ঠিক তেমনি নিজে নিজে তা সরেও গিয়েছিল। সেখান থেকেই হয়ত সেই লেখক কল্পনা করেছিলেন এবং একটা আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশও করে বসলেন। জার্নালে প্রকাশ করার জন্যে যে পরীক্ষা নিরীক্ষা লাগে বা যে যুক্তিতর্ক লাগে সেখানে তার কিছুই ছিল না শুধু অন্ধবিশ্বাস ছাড়া। তবে তিনি একটি হাস্যকর যুক্তি দেখিয়েছিলেন সেটা হল যমজ বাচ্চা জন্ম হওয়া প্রকৃতির যেমন একটা দূর্ঘটনা সেরকম মহাকাশেও এরকম দূর্ঘটনা ঘটতে পারে, জন্ম হতে পারে একাধিক একরকমের গ্রহ। তিনি এটি নিতান্তই প্রচার পাওয়ার জন্যে প্রকাশ করেছিলেন যেমন সত্যি তেমনি অন্য বিজ্ঞানীরা শুধু হাসাহাসি করে ক্ষান্ত দিল না, সেই লেখককে উন্মাদ বলে অখ্যায়িত করল।
৩০৪৮ সাল
২০৪৮ সালের ঠিক এইদিনে মিয়াজুল এবং তার দল মহাকাশযানে করে রওনা দিয়েছিল অজানার উদ্দেশ্যে, সেই অভিযানের আজ শত বর্ষপূর্তি। তারা দলে ছয়জন যাদের মধ্যে একজন চিকিৎসক, দুইজন জীববিজ্ঞানী, দুইজন মহাকাশচারী এবং একজন সাধারন মানুষ। সেই সাধারন মানুষটিই হচ্ছে মিয়াজুল যাকে এই দলের দলনেতা বানানো ছিল একটা বিস্ময়। আরেকটি বিস্ময় ছিল একজনও পদার্থবিজ্ঞানী না থাকা। ওরা যে কাজে এসেছিল তার জন্যে একজন হলেও পদার্থবিজ্ঞানী দরকার ছিল যে কাজটি সামলিয়েছে মিয়াজুল নিজে। সে কোন পদার্থবিজ্ঞানী নয় তবে পদার্থবিদ্যা নিয়ে তথ্য আর্কাইভে যা তথ্য আছে সে সেগুলোই দারুনভাবে কাজে লাগিয়েছে।
মিয়াজুল কন্ট্রোলরুমে বিশাল স্ক্রীণের দিকে তাকিয়ে আছে। মহাকাশযানের গতি, ভিতরে বায়ুর চাপ, অক্সিজেনের পরিমান, তাপমাত্রা ইত্যাদি রুটিন কাজের অনুসন্ধান শেষে পাশের স্ক্রীণের সামনে এসে দাড়ায়। সেই স্ক্রীণে মহাকাশে দেখা যায় যেখানে এখন কালো অন্ধকারের মধ্যে পৃথিবী একটু একটু করে বড় হতে শুরু করেছে। সেই দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে সে। এইত আর কয়েকদিন তারপরই পৌঁছে যাবে পৃথিবীর বুকে। স্ক্রীণের ছবি বিভিন্ন এ্যাংগেলে ঘুরিয়ে মহাকাশের দৃশ্য দেখা যায়, সে কি মনে করে ১২০ ডিগ্রী ঘুরিয়ে দেয়। আবার পৃথিবীর ছবি দেখে মুগ্ধ হয় সে কিন্তু একটা খটকা লাগে তার মনে সেটা কি তা ধরতে তার পাঁচ-ছয় মিনিট সময় কেটে যায়। যখন বুঝতে পারে আবার আগের জায়গায় নিয়ে যায় স্ক্রীণের ছবিকে। কিছুক্ষন পরেই সে নিশ্চিত হয় পৃথিবীর ঘূর্ণন পথে পৃথিবীর মত আরেকটি গ্রহের অস্তিত্ব দেখা দিয়েছে। সে সাথে সাথে এটা নিয়ে নিয়ে ক্যালকুলেশন করতে লেগে যায়। দুই গ্রহের গতি, অক্ষরেখা সবকিছু পর্যালোচনা করে পৃথিবীর জন্যে এক অশনি সংকেত বের করে সে।
এক ঘন্টা পর
ছয়জন সেই স্ক্রীণটাকে ঘিরে ধরেছে। সবকিছু দেখিয়ে মিয়াজুল সবাইকে পাশে রাখা গোল একটা টেবিলে বসতে অনুরোধ জানায়। একে একে সবাই শান্ত পায়ে হেঁটে এসে বসে পড়ে। জীববিজ্ঞানী যার নাম সারিকা সেই প্রথমে কথা বলল,
“মিয়াজুল ব্যাপারটা আমাদের বিস্তারিত বল।”
“আমি বলছি, উত্তর মেরু আর দক্ষিন মেরু সমান দূরত্বে রেখে একটি রেখা কল্পনা করা হয়। সেই রেখা থেকে আমাদের পৃথিবী প্রায় ১৬৭০ কিমি/ঘন্টা বেগে সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে আর নতুন পৃথিবীটা প্রায় ২০০০ কিমি/ঘন্টা বেগে ঘুরছে। সমস্যাটা এখানে না। সমস্যা হচ্ছে নতুন পৃথিবী আমাদের পৃথিবী থেকে এখনো প্রায় ৩০০০ মাইল দূরে আছে এবং প্রতি ঘন্টায় ৩২ কিমি করে নিজ অক্ষরেখা হতে পৃথিবীর দিকে সরে আসছে। নতুন পৃথিবীটা এখন যে অবস্থানে আছে তা বিশ্লেষন করলে দেখা যায় ঠিক চারদিনের মাথায় সেটা আমাদের পৃথিবীকে আঘাত হানবে এবং ক্ষতি হবে অপূরণীয়।”
চিকিৎসাবিদ জুবায়ের আর্তনাত করে উঠে বলে,
“কি বলছেন ভাই, আমরা পৃথিবীর বুকে পৌঁছার আগের দিন? আমরা আর পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারব না?”
“ব্যাপারটা সেরকমই।” উত্তর দেয় মিয়াজুল।
“সেখানের ভূপৃষ্ঠ কেমন? জীব বৈচিত্র সম্পর্কে জানতে পেরেছ?” আরেক জীববিজ্ঞানী জাকারিয়া প্রশ্ন করে বসে।
“ভূপৃষ্ঠ প্রায় আমাদের পৃথিবীর মতই। কিন্তু প্রাণীগুলো ঠিক মানুষদের মত হলেও ঠিক মানুষ নয়। আমি পৃথিবীর খবর আর্কাইভে এই নিয়ে অনুসন্ধান করেছি। এ সম্পর্কে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই।” আবারো মিয়াজুল উত্তর দেয়।
“তোমার রিপোর্টটা আমাদের দেখতে দাও।”
মিয়াজুল তার করা রিপোর্টা সবাইকে খুলে দেখায়।
“কোন ভাবে নতুন পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ করে দেওয়া যাবে না?” সারিকা জিজ্ঞেস করে বসে।
সত্যিকারের পদার্থবিজ্ঞানী থাকলে হয়ত হেসে উঠত। কিন্তু মিয়াজুল না হেসে উত্তর দেয়,
“সেটা সম্ভব না, যদি সম্ভব হত তবে মেরুর প্রাণীগুলো ছাড়া আমার মনে হয় কোন প্রাণী আর বাঁচবে না। পৃথিবীকে বাঁচাতে হবে তাই বলে আমরা সেখানকার প্রাণীগুলোকে মারতে পারি না।”
এতক্ষন দুই নভোচারী চুপচাপ বসে ছিল। ওদের মাঝে যে বয়সে ছোট যার নাম হাকিম সে বলে উঠল,
“মহাকাশযানের রসদও ফুরিয়ে আসছে, খুব জোর আর দশদিন এই রসদ নিয়ে আমরা বেঁচে থাকতে পারব।”
“আমরা আমাদের সলিড ওয়েস্ট রিসাইকেল করে বেঁচে থাকতে পারি।” জুবায়ের উত্তর দেয়।
“এ্যাক, কি বল এইসব?” সারিকা মুখ বিকৃতি করে বলে।
“কিন্তু জ্বালানীর কি হবে?” সারিকার পরেই হাকিম প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় সবার উদ্দেশ্যে।
“উফ, তোমরা থামবে, যেখানে পৃথিবীই ধ্বংস হতে যাচ্ছে সেখানে আমাদের বাঁচা না বাঁচার কথা খুবই সাধারণ ব্যপার।” মিয়াজুল স্বাভাবিক কণ্ঠের চেয়ে একটু জোরে সবাইকে কথাগুলো বলে।
“ভাব, কি করে এই ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচা যায়?”
আরো কিছুক্ষন আলোচনা করার পর মিয়াজুল আর হাকিম ছাড়া সবাই আশা ছেড়ে উঠে চলে যায়। সারিকা প্রার্থনা করতে বসে পড়ে, জুবায়ের তার কাছে রাখা কিছু প্রিয়জনের ছবি দেখতে থাকে আর বাকি দুজন কিভাবে জ্বালানি খরচ কমানো যায় তা দেখতে চলে যায়।
মিয়াজুল আর হাকিম কিছুক্ষন ঝিম মেরে বসে থাকার পর মিয়াজুল হাকিমকে বলে,
“একটা কাজ করে দিবে?”
“কি কাজ?”
“তুমি তথ্য আর্কাইভ থেকে দেখ, কি করে ভৌগলিক মেরু এবং ম্যাগনেটিক মেরু বের করে একটু দেখে নতুন গ্রহের ম্যাগনেটিক মেরু বের কর। মনে রাখবে, দুটোর অবস্থান কিন্তু এক জায়গায় থাকে না, এটা তুমি বের করতে থাক আর আমি বাকি কাজ সেরে ফেলি।”
এ কথা বলেই তার মুখে সুক্ষ্য হাসি ফুটে উঠে। হাকিম কিছু বুঝতে না পারলেও ভরসা পায়, অনেকদিন হয়ে গেল একসাথে কাজ করছে ওরা।
পরিশিষ্ট
মিয়াজুল তাদের মহাকাশযানের চারদিকে পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের মত ০.৩ থেকে ০.৬ গস মত ম্যাগনেটিক ফিল্ড বানিয়ে নতুন গ্রহের উত্তর মেরুর কাছে মহাকাশযানে বানোনো উত্তর মেরু নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে নিয়ে যায়। ম্যাগনেটিক আকর্ষনে গ্রহটির কক্ষপথ পরিবর্তনের হার ৩২ কিমি/ঘন্টা থেকে ৭০ কিমি/ঘন্টা হয় যার ফলে নতুন পৃথিবী পুরাতন পৃ্থিবীর পাশ ঘেষে চলে যায় যা মিয়াজুলদের পৃ্থিবীকে বাঁচিয়ে দেয়।

No comments:

Post a Comment