Saturday, December 6, 2014

অনলাইনে আয় করবার ১০টি উপায়

 অনলাইন সবার জন্যেই একটি প্রিয় বিষয়, বিশেষ করে টিনেজারদের জন্যে। তারা সবসময় চায় তাদের যা পছন্দ তা করতে এবং কিছু অর্থ উপার্জন করতে। কিশোর-কিশোরীরা প্রধানত সেসব কাজ বেছে নিতে চায় যেখানেঃ-
১।কাজটা সহজ হবে,
২।কাজটা এড্‌ভেঞ্চারমূলক হবে
৩।কাজটাতে নুন্যতম পুজিঁ লাগবে কিংবা লাগবেই না
আমি ইন্টারনেট জগতকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি কারণ, এটি এমন একটি মাধ্যম যেখানে প্রচুর অর্থ উপার্জনের রাস্তা রয়েছে আর তুমি ঘরে বসেই এসব করতে পারো।
এখন আমি কিশোর-কিশোরীদের অনলাইনে আয়-রোজগার করবার ১০টি উপায় উপস্থাপন করবো 
একটি ব্লগ দ্বারা আয় 
১।পে-পার-ক্লিক(ক্লিক করলেই টাকা)
যদি তুমি নিছক আনন্দের জন্যে ব্লগ করে থাকো। সেটি হতে পারে তোমার প্রিয় বিষয়ের উপর। একসময় যখন তুমি তোমার ব্লগে যথেষ্ট লোকজনের আনাগোনা দেখতে পাবে তখন “পে-পার-ক্লিক” বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সেখান থেকে লাভ করতে পারো। তোমাকে শুধু সেখানে পাব্‌লিশার বা “বিজ্ঞাপন প্রকাশক” হিসেবে সাইন আপ করতে হবে এরপর তুমি তোমার ব্লগে বিজ্ঞাপন দিতে পারবে। যখন কোনো পাঠক সেই বিজ্ঞাপনে ক্লিক করবে, তখন তুমি একটি লভ্যাংশ পাবে, ব্যাস।
তুমি তোমার ব্লগে মনোযোগ দাও আর তোমার ইনকাম আস্তে আস্তে বাড়তে থাকবে। অনলাইনে আয় রোজগার করার এটিই সবচেয়ে সহজ ও সর্বোত্তম পন্থা তবে শুধু টিনেজারদের জন্যেই নয়, ওয়েবমাস্টারদের জন্যেও বটে।
একটি খুবই জনপ্রিয় পে-পার-ক্লিক সংস্থা হচ্ছে গুগল এড্‌সেন্স আর এছাড়াও এরকম আরো সংস্থা রয়েছে যেমনঃ বিড্‌ভের্‌টাইজারইয়াহু পাব্‌লিশার নেটওয়ার্ক, ক্রিস্প্‌ এডস্‌ ইত্যাদি। এগুলোতে ফ্রি-তে জয়েন করা যায় এবং আয় করা যায়।
২।পেড্‌ বা স্পনসর করা রিভিউ(টাকা নিয়ে রিভিউ লেখা)
তোমার যদি একটি ব্লগ থেকে থাকে তবে তুমি মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তাদের কথা লিখে অনেক মোটা অংকের আয় রোজগার করতে পারো। এসব স্পনসর করা রিভিউ-এ ১০০ থেকে ২০০ শব্দের লেখার জন্যে তুমি গড়ে ৫ থেকে ২০ মার্কিন ডলার(প্রায় ৩৫০ থেকে ১৪০০ টাকা) পাবে। যদি তোমার ব্লগে বেশি পাঠক আনাগোনা থাকে কিংবা সার্চ র‌্যাংক বেশি থাকে তবে তুমি আরো বেশি টাকা পেতে পারো। এটি অনলাইন উপার্জনের আরো আধুনিক একটি রাস্তা এবং পে-পার-ক্লিক এর চাইতে উত্তম। পেড্‌ রিভিউ পাওয়ার বিভিন্ন মাধ্যম রয়েছে। যেমনঃপেপারপোস্ট, স্মর্টি, লাউড্‌লঞ্চস্পনসরড্‌ রিভিউস্‌ ইত্যাদি।
একটি ওয়েবসাইট দ্বারা আয়
৩।এফাইলিয়েট মার্কেটিং(সেবামূলক গোষ্ঠীর সাহায্য করা)
[উল্লেখ্য, আমি এখানে সবার বোঝার জন্যে লিখলাম যে এফাইলিইয়েট শব্দের অর্থ গ্রুপ বা কোম্পানী বা বন্ধুত্ব।]
তুমি একজন এফাইলিয়েট হিসেবে বিভিন্ন কোম্পানী বা সংস্থায় সাইন-আপ করতে পারো। তোমার ওয়েবসাইটে শুধু এফাইলিয়েটদের বিজ্ঞাপন দিবে আর দেখবে পাঠকেরা যেন তোমার লিংকের অধীনে সেখানে সাইন-আপ করে। প্রতিটি পন্য বিক্রয়ের জন্যে অথবা সাইন-আপের জন্যে তুমি কমিশন পাবে। এই কমিশন কোম্পানীভেদে ভিন্ন হতে পারে। একটি কমিশন গড়ে হতে পারে ৫ থেকে ২০ ডলার আর যদি পন্যাটি আরও এক্সক্লুসিভ বা আকর্ষনীয় হয় তবে প্রতিটি বিক্রয়ে তুমি ৫০ থেকে ১০০ ডলার পেতে পারো।
অন্য সকল রাস্তার চেয়ে এফাইলিয়েট মার্কেটিং অধিকতর কঠিন কারণ, তোমাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লোকজনকে ওয়েবসাইটে আনতে থাকতেই হবে। গুগলে সার্চ করে তোমার ওয়েবসাইট-এর বিষয় “ফ্রী এফাইলিয়েট প্রোগ্রাম” সম্বন্ধে জানো আর সাইন-আপ করো।
৪।একটি সেবামূলক ব্যবসা করো
যদি তুমি অনলাইনের বাইরে অর্থাৎ আসল জীবনে চাকরী করে থাকো তবে তোমার সেবা অনলাইনে বিক্রি কর। যদি তুমি ফ্যাশন ডিজাইনার, অনুষ্ঠান আয়োজক, চিত্রগ্রাহক হয়ে থাক অথবা ব্যান্ড সংগীত করে থাকো তবে, তোমার মহল্লায় তোমার এই সেবাকে বাজারজাত করতে একটি ওয়েবসাইটওতৈরী কর। তুমি তোমার সেবার কাজ, যেমনঃ বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধীদের জন্যে কেনাকাটা করে দেওয়া, বাচ্চাদের দেখাশোনা করা ইত্যাদি অনলাইনে প্রচার করতে পারো।
টিনেজার্‌রা অনলাইনের বাইরে অনেক কাজ করে থাকে। তুমি তোমার সুবিধার্থে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করতে পারো। তোমার নিজের পূর্ণ বিবরণ, ছবি, যে কাজটি তুমি পুর্বে করেছিলে আর তোমার পারিশ্রমিক হার ওয়েবসাইটে এটেঁ দাও আর দেখবে মানুষ তোমাকে তাদের কাজের জন্যে ডেকে নিচ্ছে।
৫।ওয়েব রিসেলার(ইন্টারনেটের খুচরা ব্যবসায়ী)
তুমি একজন ইন্টারনেটের খুচরা ব্যবসায়ী হয়ে অনলাইনে কিছু বাড়তি আয় করতে পারো। যেকোন ওয়েব কোম্পানীতে ওয়েব রিসেলার হিসেবে সাইন-আপ করে তোমার ডোমেইন তত্ত্বাবধান করো আর ডোমেইন বিক্রি ও হোস্টিং সুবিধা দিয়ে লাভবান হও। এজন্যে অবশ্যই মুলধন প্রয়োজন হবে, কিন্তু একবার তুমি ব্যপারটা বুঝে গেলে, তুমি অনেক মোটা অংকের লাভ করতে পারবে।
এই ব্যবসা শুরু করার পুর্বে তোমার জেনে নেওয়া প্রয়োজনঃ-
ক।ওয়েবসাইট সম্বন্ধে
খ।ওয়েবমাস্টার সম্বন্ধে
গ।ডোমেইন ও অন্যান্য বিষয় সম্বন্ধে
নতুবা, তুমি একটি ব্যর্থ কিশোরে পরিণত হবে।
কোন ওয়েবসাইট ছাড়া আয়
৬।ইবে (ebay) নিলাম
ইবে হচ্ছে অনলাইনের সবচেয়ে বড় হাট-বাজার। যেখানে প্রচুর ক্রেতা ও বিক্রেতার সমাগম হয়। তুমি ইবের এফাইলিয়েট হয়ে আয় করতে পারো। তুমি তোমার পন্য অনলাইনে বিক্রি করে আয় রোজগার করতে পারো। অনলাইনের অনেকেই “ইবে” নিলামের মাধ্যমে আয় রোজগার করে যাচ্ছে। ইবে-তে সাইনইন করা ফ্রী হলেও কিছু বিক্রির জন্যে রাখতে হলে টাকা লাগে।
ইবে ব্যবহারে যা যা লাগবেঃ-
ক।ভালো এবং অন্যরকম পন্য
খ।ক্রেডিট কার্ড
গ।পে-পেল একাউন্ট
ঘ।তোমার পন্যের পরিবহন ব্যবস্থা
ইবেতে নিলামের ব্যপারটা বোঝা কঠিন কিন্তু, এ থেকে মুনাফা বানানো যায় আর অনেক টিনেজার্‌রা তাদের পুরোনো দ্রব্যাদি বিক্রি করে অনেক পয়সা বানাচ্ছে।
৭।একটা স্ট্যাটাস বিক্রয় হবে
আজকাল অধিকাংশ টিনেজার্‌রাই সোস্যাল মিডিয়ায় চরমভাবে সম্পৃক্ত। যেমনঃ ফেসবুক, ডিগ্‌, স্টাম্বলআপন আর মাইস্পেস। যদি তুমি এরকম সোস্যাল জগতে পাওয়ার ইউসার বা “শক্তিশালী ব্যবহারকারী” হয়ে থাকো তাহলে এটি তোমার জন্যে একটা বড় সম্পদ হতে পারে। “শক্তিশালী ব্যবহারকারী”মানে কি, অর্থাৎ যার এতো বন্ধু, ভক্ত কিংবা রাঘব-বোয়াল রয়েছে যে, সে কিছু লিখলেই তা সরাসরি অনেক বড় খবর হয়ে যায়।
“সোস্যাল স্ট্যাটাস” ব্লগার ও ওয়েবমাস্টারদের জন্যে অনেক উপকারী। তুমি কারো জন্যে সোস্যাল সাইটে লিখার জন্যে টাকা নিতে পারো। “ডিগ্‌”এর অনেক শক্তিশালী ব্যবহারকারীগণ ৩০০ থেকে ৫০০ ডলারে একেকটি স্ট্যাটাস বিক্রি করে। এছাড়াও তুমি তোমার প্রোফাইল অন্য কাউকে বিক্রি করেও পয়সা বানাতে পারো। এ প্রসঙ্গে বলে রাখি, আমিও একজন পাওয়ার ইউসার বা শক্তিশালী ব্যবহারকারী যদি তোমার কোন প্রকার গেমিং ওয়েবসাইটে লোকজনের প্রয়োজন পড়ে তবে আমি সাহায্য করতে পারি।
৮।সার্ভে নাও(জরিপ করো)
ব্লগিং, পে-পার-ক্লিক, স্পনসরড্‌ রিভিউ আর এফাইলিয়েট মার্কেটিং-এর পুর্বে এসব সার্ভে বা জরিপ অনেক জনপ্রিয় ছিল। এর জন্যে কোন ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হয় না। শুধু তুমি একেকটি সার্ভে বা জরিপ সম্পূর্ণ করবে এবং টাকা পেয়ে যাবে। এমন অনেক মাধ্যম রয়েছে যাতে, তুমি ইমেইল পড়বে ও ইমেইল প্রক্রিয়া সাধন করবে, অনলাইনে গেম খেলবে আর শপিং করবে। এমনই কিছু সার্ভে সাইট হচ্ছেঃ- সার্ভে সেভীআর ইনবক্স ডলারস্‌।
৯।ওয়েব ডিজাইনার(ওয়েবসাইট কারিগর)
আজকাল অনেক মানুষ ইন্টারনেট ব্যবসায়ে প্রবেশ করছে এবং তারা নিজের জন্যে ভালো ওয়েবসাইট চাচ্ছেন। যদি তোমার প্রচুর সৃজনশীলতা এবং ওয়েবসাইট তৈরী করার যোগ্যতা বা দক্ষতা থেকে থাকে তাহলে তাদের ওয়েবসাইট তৈরি করে তুমি তোমার নিজের ভাত জোগাড় করতে পারো।
মানুষ ওয়েবসাইট তৈরীর ক্ষেত্রে টিনেজারদের প্রতি বেশি আগ্রহী, কারণ দুটি। এক, তারা বেশি সৃজন কাজ করতে সক্ষম এবং দুই, তারা টিনদের চাহিদা অনুযায়ী ওয়েবসাইট তৈরী করতে পারবে। কখনো কখনো অনেকে ওয়েবসাইট তত্ত্বাবধানের স্থায়ী একটা চাকরী পেয়ে যায়। এটি কিশোর-কিশোরীদের আয় রোজগারের জন্যে সুন্দর একটি মাধ্যম।
১০।বিনোদন
তুমি তোমার নিজের তথ্য প্রযুক্তির পরামর্শগুলো একটি পড্‌কাস্টে রেকর্ড করে অনলাইনের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারো। তুমি তোমার ব্যান্ডের গান অথবা তোমার আইফোন সম্পর্কীত পরামর্শের ভিডিও রেকর্ড করতেও পারো। এসব পড্‌কাস্ট/গান/ভিডিও ফ্রীতে সবাইকে দাও আর মানুষ তোমার কাছ থেকে আরো আশা করবে।
তুমি এগুলো বিক্রিও করতে পারো। ফরমায়েশ অনুসারে তুমি টাকা পাবে। অনলাইনে এমন অনেক অনলাইন ভিডিও বা অডিওমুলক ওয়েবসাইট রয়েছে যারা তোমার ভিডিওর জন্যে টাকা দিবে।
১১।টিন্‌ বা কিশোর-কিশোরীদের জন্যে আর কি কি আছে?
প্রকৃতপক্ষে, অনলাইনে টিন্‌দের আয় রোজগারের জন্যে রাস্তার কোন অভাব নেই। এখানে রয়েছে সরাসরি এড্‌ বিক্রি, এমন কিছু এমএলএম(মাল্টি লেভেল মার্কেটিং)ব্যবসা যেগুলো অনলাইনে চলে থাকে, এমন কিছু ফোরামও যেগুলো থেকে আয় করা যায় আর তুমি উপন্যাস লিখতে পারো, তুমি তোমার লেখার সমতূল্য ছবি, ভিডিও ও গানের বিনিময়েও টাকা পাবে, তুমি অনলাইনে অর্থ বিনিয়োগ করেও লাভবান হতে পারো আরও ইত্যাদি উপায় আছে।

No comments:

Post a Comment