Friday, December 12, 2014

প্রিয় গুগল ডাক্তার



প্রিয় গুগল ডাক্তার

http://www.banglatelegraph.com/wp-content/uploads/2014/12/google-doctor.jpg
স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে ইন্টারনেটকিন্তু এসব তথ্য কিভাবে কাজে লাগানো যাবে? তা নিয়েই রিডার্স ডাইজেস্ট অবলম্বনে লিখেছেন আসিফ হাসান
মাত্র ২০ বছর আগেও চিকিৎসাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কোনো তথ্য জানার একমাত্র মাধ্যম ছিল আপনার চিকিৎসকআপনি হয়তো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা কোনো চিকিৎসকের চেম্বার থেকে জেনে এলেন, আপনি কিছুটা অপরিচিত কোনো রোগে আক্রান্ত
আপনি হয়তো বুঝতে পারছেন না, কেন রোগটি হলো, এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কোনো পন্থা আছে কি না, তা নিয়ে আপনি ভাবছেননাছোড়বান্দা কেউ কেউ হয়তো চিকিৎসা অভিধান ঘাঁটাঘাঁটি করতেনকিন্তু ঠিক কী ঘটছে, তা জানা খুব সহজ ছিল না
কিন্তু দিন এখন বদলে গেছেএক সময় যেসব চিকিৎসাবিদ্যা রহস্যের আবরণে মোড়া ছিল, এখন সেগুলো সবার কাছে উন্মুক্তকোটি কোটি পৃষ্ঠা চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্য মাউসের একটি ক্লিকেই আপনার আয়ত্তে এসে যাচ্ছেজটিল কোনো রোগ কিংবা স্রেফ মাথাব্যথার মতো সমস্যাতেও এখন অনেকে ইন্টারনেটের আশ্রয় নিচ্ছেনকেউ কেউ ইন্টারনেটেই স্বাস্থ্যপরিচর্যাজনিত সব তথ্য খুঁজে বেড়াচ্ছেনখুব জটিল নয় বিষয়টি
আপনি আপনার লক্ষণগুলো টাইপ করুন, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে থাকলে সেগুলোও জানান, খুব অল্প সময়েই আপনি প্রয়োজনীয় পরামর্শ পেয়ে যাবেনএমনকি আপনাকে মানসিক শক্তি জোগাতে উদ্দীপনামূলক কাহিনীও জানাবে, কোন কোন ওষুধ খেতে হবে, কোন কোন থেরাপি নিতে হবে তার বিস্তারিত জানবেনমজার ব্যাপার হলো, এ ব্যাপারে আপনার নিজের চিন্তাভাবনাও অন্যকে জানাতে পারবেন
সবচেয়ে বড় কথা হলো, এসব তথ্য আপনি পাচ্ছেন বিনা মূল্যে, সহজে এবং আপনাকে কাক্সিক্ষত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত রাখছেঅনেক সময় আপনি আপনার পারিবারিক চিকিৎসকের চেয়েও দ্রুতগতিতে এ সব কিছু পেতে পারছেনহংকং কলেজ অব সাইকিয়াট্রিকসের বিশেষজ্ঞ ডা. লি উইং কিং এ ব্যাপারে এক মজার কাহিনী শোনালেন : আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক তার এক বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করল, তার ছেলে যে রোগে আক্রান্ত হয়েছে, সেটা কোনো জটিল রোগ কি নাঘণ্টাখানেক পর ই-মেইলে ওই অধ্যাপক যখন জবাব দিলেন, ততক্ষণে বন্ধুটি গুগল ও YouTube-এর ভিডিও দেখে সে সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য পেয়ে গেছেন
আপনি কিভাবে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন? ধরুন আপনি সার্চ ইঞ্জিনে টাইপ করলেন ‘headache’ (মাথাব্যথা)আপনি কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই জেনে যাবেন, মাথাব্যথা হতে পারে মানসিক চাপ, বিশেষ কোনো খাবার গ্রহণ, ম্যালেরিয়া, মাথায় আঘাত, ব্রেন টিউমার ইত্যাদি কারণেএতে আপনার জানা তথ্যগুলো যেমন পাবেন, বিরল এবং অনেক চিকিৎসকের অজানা তথ্যও আপনি পেয়ে যাবেন
অনেক তথ্য থেকেই আপনাকে প্রয়োজনীয় কথাটি খুঁজে নিতে হবেঅবশ্য এটা শুধু চিকিৎসার ব্যাপারেই নয়, ইন্টারনেটে আপনি যে বিষয় নিয়েই অনুসন্ধানে নামবেন, সেখানেই প্রায় একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেনএমনকি সংবাদপত্র, বই সম্পর্কেও একই কথা বলা যায়মালয়েশিয়ান ব্রেস্ট ক্যান্সার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রঞ্জিত কাউর বলেন, ওয়েবে ক্যান্সারসংক্রান্ত তথ্য অনেক দরকারিএতে কিছু ক্ষতিকর তথ্যও থাকে
পাঠককেই তথ্যরাশি কতটুকু নির্ভরযোগ্য তা বাছাই করে নিতে হবে
অর্থাৎ ইন্টারনেট নির্ভুল তথ্যের বিপুল সমারোহ নয়তবে এক জরিপে দেখা গেছে, স্তন ক্যান্সার সম্পর্কিত ৩৪৩ পৃষ্ঠার মধ্যে ভুল মাত্র ৫ দশমিক ২ শতাংশ তবে বিকল্প চিকিৎসাসংক্রান্ত ওয়েব সাইটগুলো কিছুটা বেশি বিভ্রান্ত করেসেই জরিপেই দেখা গেছে, প্রচলিত সাইটগুলোর চেয়ে বিকল্প চিকিৎসা ব্যবস্থাসংক্রান্ত ওয়েব সাইটগুলো ১৫ শতাংশ বেশি মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে থাকেনিয়মিত ব্যবহারে এ ব্যাপারে দক্ষতা সৃষ্টি হবে
আবার কোনো কোনো সাইটে প্রশ্ন করা ও জবাব পাওয়ার ব্যবস্থা থাকেএগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারেএমনকি আপনি আপনার চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেও এ ধরনের কোনো সাইটে গিয়ে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে কিছু জেনে নিতে পারেনফলে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে আরো ভালোভাবে আপনার সমস্যাটি তুলে ধরতে পারেন
এত সব সুবিধার কারণেই উন্নত দেশের নাগরিকরা স্বাস্থ্যপরিচর্যার ব্যাপারে অনেক বেশি ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে উঠছেনসিঙ্গাপুরে এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ লোক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যের জন্য ইন্টারনেটের ওপর ভরসা করে থাকেনযুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ জনের আটজনই চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্যের জন্য ওয়েব ব্যবহার করেন, তাদের ৫০ শতাংশই সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার জন্য বিজ্ঞানের এই শাখাটির আশ্রয় গ্রহণ করেন
অর্থাৎ চিকিৎসাশাস্ত্রটি জানার প্রক্রিয়াটি ভিন্ন মাত্রা ধারণ করেছেএক সময় কিছু জানতে, বুঝতে কোথাও যেতে হতো, কথা বলতে হতো, শুনতে হতোএখন আপনি ঘরে বসেই ব্লগ, কেস স্টাডিজ, টুইটার, ফেসবুকসহ নতুন নতুন মাধ্যমে জানতে পারছেনগুগল ডাক্তার প্রয়োজনীয় বিদ্যা জানিয়ে দিচ্ছেনমালয়েশিয়ার এক মহিলা এভাবেই তার পুরাতন মাথাব্যথা সারিয়ে তুলেছেন৪৭ বছর বয়সী এই মহিলা এখন স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সাঁতার কেটে, জগিং করে আর গোশত কম খেয়ে মাথাব্যথা থেকে মুক্তি পেয়েছেনসবটাই হয়েছে গুগল ডাক্তারের পরামর্শে
তবে তাই বলে আপনাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে নাএকটি কম্পিউটার কিছুতেই দক্ষ একজন চিকিৎসকের বিকল্প হতে পারে নাঅনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকই আপনার রোগটি ধরতে পারবেনআপনি হয়তো লিখে যেটা প্রকাশ করতে পারছেন না, সেটাই চিকিৎসক আপনাকে দেখে অনুমান করতে পারেন এবং নিজে থেকে প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে সমাধান দিতে পারেন
এমনকি অনেকে ইন্টারনেটের তথ্যরাশিতে বিভ্রান্তও হতে পারেনঅনেকেই কথামালার বেড়াজালে পড়ে মনে করতে পারেন তিনি জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত, অথচ আপনি সাধারণ কোনো সমস্যায় পড়েছেনএতে করে মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে
এর সমাধান কী? সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি অনলাইনে যেসব তথ্য পেয়েছেন, সেগুলো নিয়ে আপনার চিকিৎসককে জানানতিনি প্রয়োজনে নানা পরীক্ষা করে আপনাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপত্র দিতে পারবেন
সঠিকভাবে অনুসন্ধানের উপায়
অনেক দেশের সরকার এখন স্বাস্থ্যসংক্রান্ত অনেক তথ্য উন্মুক্ত করে দিচ্ছে অনেক এনজিওও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসছেসব সময় চেষ্টা করবেন, নির্ভরযোগ্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতেচটকদার কোনো বিজ্ঞাপন বা ওয়েব সাইটে বিভ্রান্ত হবেন নাসবচেয়ে ভালো হয়, ব্যবস্থাপত্র ব্যবহারের আগে আপনার চিকিৎসকের সাথে যদি পরামর্শ করে নেন
বিজ্ঞানের এই দিকটির ভালো কিছুর সাথে খারাপও কিছু আছেপুরোপুরি ভালো নয় কিছুই
নিচের সাইটগুলোতে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে
www.myhealth.gov.my
মালয়েশিয়া সরকারের এই ওয়েব সাইটটি স্বাস্থ্যসেবাসংক্রান্ত তথ্য ও লিঙ্কের ব্যাপারে অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য
www.moh.gov.sg
সিঙ্গাপুর সরকারের এই সাইটটি মানসম্পন্ন তথ্য দিয়ে থাকে
www.webmd.com
এখানে স্বাস্থ্যপরিচর্যাসংক্রান্ত পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়
medlineplus.gov
মার্কিন ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের স্বাস্থ্যসেবা তথ্য এখানে পাওয়া যাবে
www.pubmedcentral.nih.gov
কোটি কোটি বৈজ্ঞানিক জার্নাল, প্রতিবেদন রয়েছে এই ডিজিটাল আর্কাইভে এবং এসব তথ্য বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে
www.cochrane.org.au/library
এতে প্রমাণ্যভিত্তিক চিকিৎসা তথ্য পাওয়া যায়
scholar.google.com
এতে শুধু বিশেষজ্ঞদের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যায়
www.labtestsonline.org
এতে ল্যাব টেস্টের ফলাফল রয়েছে
সিঙ্গাপুরে
এক জরিপে দেখা গেছে, দেশটির ৪০ দশমিক ৩ শতাংশ লোক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যের জন্য ইন্টারনেটের ওপর ভরসা করে থাকেনযুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ জনের আটজনই চিকিৎসাসংক্রান্ত তথ্যের জন্য ওয়েব ব্যবহার করেন, তাদের ৫০ শতাংশই সুনির্দিষ্ট চিকিৎসার জন্য বিজ্ঞানের এই শাখাটির আশ্রয় গ্রহণ করেন
নিচের ওয়েব সাইটগুলো আপনার ইন্টারনেট দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক হতে পারে
www.vts.intute.ac.uk/he/tutorial/medic
www.cancer.gov/cancertopocs/factsheet/information/internet

সুত্র ঃ বাংলা টেলিগ্রাফ ডেস্ক   ২ ডিসেম্বর, ২০১৪


No comments:

Post a Comment