Monday, January 12, 2015

The disease not, winter baby শীতে শিশুর যত অসুখ-বিসুখ

 শীতে শিশুর যত অসুখ-বিসুখ

শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কম। শীতের এই বদলে যাওয়া আবহাওয়ায়, শিশুরা তাই খুব সহজেই বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়। এ সময়ে বাতাসে ধূলোবালির পরিমাণ বেড়ে যায়, রোগ-জীবাণুর প্রকোপও বাড়তে থাকে। এই পরিবর্তিত



পরিস্থিতিতে শিশুরা নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, ডায়রিয়া, ঠাণ্ডা জ্বর, কাশি প্রভৃতিতে আক্রান্ত হয়। সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে আপনি আপনার শিশুকে এই সকল শীতজনিত রোগ থেকে মুক্ত রাখতে পারবেন। এজন্য শীতে শিশুর অসুখ বিসুখ রোগের কারণ, প্রকৃতি ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে আপনাকে জানতে হবে।
‘ব্রঙ্কিওলাইটিস’:
শীতের আগমনের সাথে সাথে কিছু কিছু রোগের প্রকোপ দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এই শীতকালটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। শীতের এই সময়টাতে শিশুদের বেশ কিছু অসুখে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। ব্রঙ্কিওলাইটিস হচ্ছে তাদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। শীত এলেই শিশুদের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়।
ব্রঙ্কিওলাইটিস হলো ফুসফুসের ব্রঙ্কিওল নামক ক্ষুদ্র একটি এককের প্রদাহজনিত রোগ। সাধারণতঃ দুই বছরের নিচের বয়সী শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে তিন থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে। সাধারণভাবে শিশুদের ঠা-াজনিত অসুখ হলেই নিউমোনিয়া বলে চালিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ব্রঙ্কিওলাইটিস সম্পূর্ণ আলাদা ধরনের একটি অসুস্থতা। নিউমোনিয়ার সাথে এর বেশ কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। তাই এই রোগ সম্পর্কে সবার বিশেষ করে মায়েদের সচেতন হওয়া বেশ জরুরী।
ব্রঙ্কিওলাইটিস একটি ভাইরাসজনিত অসুখ। শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি ক্ষেত্রে এটি রেসপিরেটরী সিনসাইটিয়াল ভাইরাস দিয়ে হয়ে থাকে। এছাড়া মেটানিউমো ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, করোনা ভাইরাস, অ্যাডেনো ভাইরাস এসব জীবাণু দিয়েও এ রোগ হয়ে থাকে।
 কোন শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়:
দেখা গেছে, যেসব শিশুরা মাতৃগর্ভে পূর্ণ সময়ের আগেই জন্ম নেয় (৩৫ সপ্তাহের আগে), জন্মের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন নিয়ে জন্মায় বা হৃৎপি-ে জন্মগত ত্রুটি আছে- সেইসব শিশুরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা নিতে হয়।
 এ রোগের লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে:
১। কাশি ২। হাঁচি ৩। শ্বাসকষ্ট, ৪। দ্রুত শ্বাস নেয়া ৫। নিঃশ্বাস ফেলার সময় শোঁ শোঁ শব্দ হওয়া ৬। কখনো কখনো বুক দেবে যাওয়া ৭। নাক দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।
এই রোগে আক্রান্ত হলে শিশুরা সাধারণতঃ হাসিখুশি থাকে। সে জন্য অনেক সময় বাবা-মা অসুখটি নিয়ে ততটা উদ্বিগ্ন হন না। কিন্তু অসুখের মাত্রা বেড়ে গেলে অনেক সময় তা মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। এ সময় শিশু নেতিয়ে পড়া বা নির্জীব হয়ে যাওয়া, খাওয়া কমে যাওয়া বা বন্ধ হয়ে যাওয়া, খুব দ্রুত শ্বাস নেয়া (৭০/মিনিট), ভয়ানকভাবে বুক দেবে যাওয়া, কখনো কখনো শ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি হতে পারে।
 লক্ষণ দেখা দিলে কি করবেন:
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই রোগে প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত শিশুদের খুব বেশি অসুস্থ বলে মনে হয় না। তাই উপরোল্লিখিত লক্ষণসমূহ দেখা দিলে নিকটস্থ হাসপাতালে অথবা শিশু চিকিৎসকের কাছে শিশুকে নিয়ে পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ব্রঙ্কিওলাইটিসে আক্রান্ত শিশুদের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হয়। খুব মারাত্মক না হলে এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হয় না। সময়মত সঠিক চিকিৎসা নিলে সহজেই এই রোগ থেকে শিশুকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব।
 ব্রঙ্কিওলাইটিস প্রতিরোধের উপায়:
ব্রঙ্কিওলাইটিস প্রধানতঃ শীতকালেই বেশি হয়ে থাকে। তাই এই সময় দুই বছরের নিচের বয়সী শিশুদের একটু আলাদা করে যতœ নিতে হবে, যেন তারা এই রোগে আক্রান্ত না হয়। শিশুদের পরিচ্ছন্নতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সবচেয়ে সঠিক উপায় হলো শিশুকে শালদুধ খাওয়ানো থেকে শুরু করে প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো।
ডা. মুহম্মদ মারূফ আলী,
সিনিয়র মেডিকেল অফিসার
আল মুত্বমাইন্নাহ মা ও শিশু হাসপাতাল, রাজারবাগ, ঢাকা।
++8801911023611
MD HELAL